Blog

বাংলাদেশে যে বড় বড় জব পোর্টাল গুলো আছে সেখানে হাজারো কোম্পানির জব সার্কুলার থাকে কিন্তু একজন গ্র্যাজুয়েট ছেলের জন্য আসলে কতটুকু ? গত কয়েক মাসে আমার কাছের বন্ধুর কাছ থেকে এব্যাপারে খুব ভালো একটা অভিজ্ঞতা পেলাম।
ম্যাক্সিমাম কোম্পানিগুলো তাদের মিনিমাম রিকুয়ারমেন্ট হিসেবে বিবিএ/এমবিএ লিখে রাখে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রধাণত এমবিএ সার্টিফিকেটধারীরাই বেশি প্রেফার পেয়ে থাকে।
রিকুয়ারমেন্টগুলা যদি ভালোভাবে খেয়াল করি তাহলে দেখি যে,
 যদি কোনও পদ থাকে ‘মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ’ এর তাহলে সেই কোম্পানিতে জয়েনের আগেই ওই কোম্পানির প্রোডাক্ট/সার্ভিসের উপর পূর্ব-অভিজ্ঞতা থাকা লাগবে।
আমার প্রশ্ন হলঃ এটা কেন ?
আমরা যখন মার্কেটিং পড়ি তখন আমাদের আসলে মার্কেটিঙের পুরো প্রসেসটা বুঝানো হয়। প্রোডাক্ট/সার্ভিস ভেদে একেক কোম্পানির স্ট্রেটেজি একেকরকম হতেই পারে। ওই কোম্পানির হয়ে কাজ না করে বা ওইকোম্পানি থেকে কোনও রকম ট্রেনিং না নিয়ে কিভাবে ওগুলো শিখবো ? নাকি আমরা কি ওগুলা স্বপ্নে পাবো ???
আচ্ছা এই কোম্পানিগুলোর রিক্রুটমেন্টে যারা থাকেন উনারা কি ভাবেন যে সবাই শুধু উনাদের কোম্পানিতে কাজ করার জন্য আলাদা ভাবে পড়াশুনা করে এসেছে ? অবশ্যই ইন্টার্ভিউয়ের সময় কোম্পানি সম্পর্কে আর কাজের ব্যাপারে বেসিক ধারণা নেয়া দরকার কিন্তু জব পোস্টেই যদি এভাবে কিছু ধরাবাঁধা নিয়ম করে ফেলেন তাহলে ফ্রেশাররা কই যাবে ? নাকি যারা এই নিয়ম গুলো করে উনারা কখনই ফ্রেশার ছিলেন না।   জন্মের পর থেকেই এক্সপার্ট!!!???

 

চাকরির অভিজ্ঞতা আর প্রাথীর বয়সে চোখ পরলে তো আরও খারাপ লাগে।
ধরেন বলা আছে যে, আবেদনকারীর বয়স ম্যাক্সিমাম ২৫ বছর কিন্তু সেইম কাজে অভিজ্ঞতা মিনিমাম ২/৩ বছর হতে হবে।
আরে ভাই ২/৩ বছর আগে তো সে ফ্রেশার ছিল, তাকে কোন কোম্পানি অভিজ্ঞতার জন্য চাকরি দিবে ? সবাই তো আপনার কোম্পানির মতই অভিজ্ঞ লোক চায়।
মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের পড়াশুনার কোর্সকে আরও অনেক ভাঙ্গানো দরকার। যেমন আমরা বিবিএ করি মার্কেটিং এ। এই মার্কেটিং এর আবার ভাগ করা উচিৎ, মার্কেটিং ইন কেমিক্যাল, মার্কেটিং ইন গার্মেন্টস, মার্কেটিং ইন কখগঘ… কারণ সব কোম্পানি চায় ওর কোম্পানির প্রোডাক্টের জন্য বেস্ট মার্কেটার।
 তাহলে কি  এখনকার কোম্পানি তাদের HRM না রেখে সরাসরি কাজের সবচেয়ে উপযুক্ত লোক খুঁজে বেড়ায় ? একজন HR অফিসার যদি থাকে তাহলে আপনারা জব পোস্টের সময় এত্ত ত্যানা পেঁচান কেন ? ইন্টারভিউ বা প্রাথমিক ট্রেইনিং এর সময় এগুলো বুঝে নিন।
কর্পোরেট মার্কেটে জব কম্পিটিশান বাড়ছে আর সেই সাথে কোম্পানিগুলোতে যারা নিয়োগদাতা তাদের ডিম্যান্ডও। অনেক জব পোস্টে দেখা যায় অমুক ট্রেইনিং থাকতে হবে, তমুক ট্রেইনিং থাকতে হবে… এইটা সেইটা আরও কত কি। মনে হয় কোম্পানিতে জব না বরং কোম্পানি পুরোটাই লিখে দিবে :/
তাহলে আমাদের জীবনে শুধু কলেজ,ভার্সিটির লেখাপড়া পর্যন্তই ইনভেস্টমেন্ট শেষ নয় ? সেই সাথে দেশের কিছু দামি দামি ইন্সটিটিউট থেকে ট্রেইনিং ও করতে হবে ? এত্ত টাকা দিয়ে লেখাপড়া আর পরে আবার এসব। এরপর এসব করার পর জব হলে আমাদের ইনকাম আসবে কত ? কত টাকা দিবে আমাদের মাসিক বেতন ?
যদি বিবিএ কমপ্লিট করা একটা মানুষের বেতন ধরা হয় প্রাথমিকভাবে ২০,০০০ টাকা । যদি এরকম কোনও চাকরি কপালে জুটে ; তাহলে কি ধরে নিবো ওই মানুষ সারাদিনে টোটাল ১০ ঘণ্টা (৮ ঘণ্টা অফিস আর যাওয়া-আসা সহ) টাইম দিয়ে আর মাসে ২৫ দিন অফিস ধরলে মাত্র ৮০ টাকা ঘণ্টা বেতন পাবে ? মানে এত্তকষ্ট করে পড়ালেখা করার পর ঘণ্টা প্রতি এই সামান্য টাকা দিয়ে কেউ একজন বিবিএ করা ছেলেকে নিজের জন্য খাঁটাতে পারবে ? এত্ত নিচে পরে গেলাম আমরা বিজনেস স্টাডিজ গ্রুপের স্টুডেন্টরা ?

 

এইতো হল অলরেডি বিবিএ কমপ্লিট করাদের কথা। আমরা যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-বিবিএ করছি আমাদের ফিউচার জব সেক্টর কেমন হবে ? আমাদের রেজাল্ট যাই হোক না কেন কিছু সবক্ষেত্রেই আমরা বাকিদের থেকে অনেক পিছিয়ে। ভালো ভালো জবের পোস্টে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে কিছু অনেক রিচ হাই লেভেলের প্রাইভেট ভার্সিটির নাম উল্লেখ থাকে। কিন্তু আমাদের… ???
অনেকদিন ধরে চিন্তা করার এই কথা গুলো। আমি এখনও এসব ফেস করি নাই। কিন্তু আমার যেসব বন্ধুরা কিছুদিন ধরেই এগুলো দেখে যাচ্ছে তাদের এই প্রবলেম গুলো খুব কাছ থেকে দেখছি।
হতে পারে আমার কিছু কথা ভুল। হতে পারে পুরাটাই ভুল। কিন্তু এগুলা আমাদের মত ভুক্তভুগিদের কথা।
এত্ত কষ্ট করে লেখাটা পরার জন্য ধন্যবাদ। গঠনমূলক সমালোচনা আর উপদেশ কাম্য 
 

You may also like

Leave a Comment