আপওয়ার্কে কিভাবে বিড করে জিতবেন?
২০১৯ সালে আপওয়ার্ক অন্যান্য ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস গুলোর মতই অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করার আগে একটা নির্দিষ্ট সেক্টরে নিজেকে বেশ ভালোভাবে দক্ষ না করে উপায় নেই।
যারা মোটামোটি কাজ শিখে মার্কেটপ্লেসে কাজের জন্য ছোটাছোটি করছেন তারা হয়তো কাজ ঠিকি শিখেছেন কিন্তু নিজের কাজ করার এই স্কিলটাকে বিক্রি করার জন্য ঠিক মত নিজেকে তৈরি করেননি।
তাই কাজ করতে পারার পাশাপাশি কাজের জন্য ঠিকমত বিড করতে পারাটাও শিখতে হয়।
নতুন যারা আপওয়ার্কে কাজ করার জন্য বিড করতে করতে ক্লান্ত তাদের জন্য আমার এই অভিজ্ঞতা হয়তো কাজ লাগবে।
চলুন এক নজরে দেখে নেই আজকের এই পোষ্টে কি কি থাকছেঃ
- ক্লাইন্ট প্রোফাইল
- ক্লাইন্টের রিকুয়ারমেন্টস
- বিডিং টাইম
- কাভার লেটার লেখার কৌশল
আপওয়ার্কে বিড করার সময় যে বিষয় গুলো মাথায় রাখা উচিৎ চলুন সেগুলো বিস্তারিত জেনে নেইঃ
১। ক্লাইন্ট প্রোফাইলঃ কোনও জব পোষ্টে এপ্লাই করার আগে অবশ্যই সেই ক্লাইন্টের প্রোফাইল চেক করে নিবেন।
ক্লাইন্টের ফিডব্যাক কেমন?
মোট কত ডলার কত খরচ করেছে?
একটিভ জব কয়টি?
ক্লাইন্টের একটিভ জব থেকে আরও দেখতে পারেন, সে কোন জবে কত বাজেটে খরচ করছে। তার হায়ার করা ফ্রিল্যান্সারদের কি ধরণের ফিডব্যাক দিচ্ছে। এবং অন্য ফ্রিল্যান্সাররা তাকে যেই ফিডব্যাক দিচ্ছে সেখান থেকে ক্লাইন্টের ডাক নাম দেখে নিবেন। ক্লাইন্টের নাম জেনে বিড করা একটা পজেটিভ ব্যাপার। এই ব্যাপারে নিচের প্যারায় লিখেছি।
২। ক্লাইন্টের রিকুয়ারমেন্টসঃ ক্লাইন্ট তার জব পোষ্টে কি ধরণের কাজ করিয়ে নিতে চাচ্ছে সেটা বেশ ঠাণ্ডা মাথায় পড়ুন। এবং আপনি পয়েন্ট আউট করুন কোন কোন জায়গায় আপনি তাকে হেল্প করতে পারবেন। যদি কোনও কাজে আপনি নিজে এক্সপার্ট না হোন বা কাজ ম্যানেজ না করতে পারেন তাহলে সেই কাজে বিড করা থেকে বিরত থাকাই ভালো।
৩। বিডিং টাইমঃ চেক করে দেখুন ক্লাইন্ট কখন জব পোষ্ট করেছে। এবং ক্লাইন্টের বাসা কোথায় কিংবা তার টাইম জোন। টাইম জোন জেনে বিড করলে তাকে সুন্দর করে সম্বোধন করা যায়। যেমন, সকালে বিড করলে “Good Morning Mr. অমুক” বা বিকেলে বিড করলে “Good Evening Mr তমুক“।
যদিও একেক জন ক্লাইন্টের ক্ষেত্রে আমি একেক ধরণের অভিজ্ঞতা পেয়েছি। যাই হোক, ক্লাইন্ট জব পোষ্ট করার পর যত দ্রুত সম্ভব বিড করলে ইন্টারভিউ এর ডাক পাবার সম্ভাবনা বাড়ে। আপাতত এটা খেয়াল করলেই হবে।
৪। কাভার লেটার লেখার কৌশলঃ একটা জব পাবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরি ব্যাপার হচ্ছে কাভার লেটার। কাভার লেটারটাই মূলত আপনার এপ্লিকেশন লেটার। এখানে বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করা যায়। ক্লাইন্ট জব পোষ্টে মাঝে মধ্যে কিছু শব্দ দিয়ে দেয় আর বলে কাভার লেটারের শুরুতেই যেন এই শব্দ দেয়া থাকে। এতে সে মূলত চেক করে কারা সম্পূর্ণ জব পোষ্ট পড়েই এরপর বিড করছে। তবে এটা খুব কম জবেই বলা থাকে।
যাই হোক, যেহেতু প্রথমেই ক্লাইন্টের নাম খুঁজে বের করার কথা বলেছিলাম, তাই সম্ভব হলে ক্লাইন্টকে তার নাম ধরে লেটার লেখা শুরু করুন। যেমন, “Dear Hiring Manager” এর বদলে “Good Evening Mr. অমুক” বা “Greetings Mr. তমুক” সম্বোধনটা মানুষকে বেশি টানে। এরপরেই সোজা চলে যান ক্লাইন্টের প্রবলেমের জায়গায় যেটার জন্য সে জব পোষ্ট করেছে। তাকে সংখিপ্ত কথার মাধ্যমে বুঝিয়ে দেন আপনি কাজটা ঠিক ডেড লাইনের মধ্যে আনুমানিক এই রেজাল্ট সহ শেষ করে দিতে পারবেন। এই ধরণের কাজে আপনার আগের পোর্টফলিও বা ওয়ার্ক স্যাম্পল অ্যাড করে দিবেন। এখন বেশিরভাগ জব পোষ্টেই কাভার লেটারের সাথে কিছু প্রশ্ন অ্যাড করা থাকে। একটু স্মারটলি সেগুলা উত্তর দিবেন। কখনই কোনও ফেইক প্রমিজ করবেন না।
এক্ষেত্রে আমি নিজে কিছু স্ট্রেটেজি মেইন্টেইন করি। আমি মার্কেটিং নিয়ে কাজ করি। তাই ক্লাইন্টের কাজের সাথে জড়িত কিছু কিওয়ার্ড অ্যাড করে বলি এই ব্যাপারে আমি ফ্রি কন্সাল্টেন্সি দিতে পারবো যদি তুমি চাও।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ফ্রি কন্সাল্টেন্সি অফার আমার জন্য খুব কাজ করে। ফ্রি কন্সাল্টেন্সি ছাড়াও কিছু কাজের ক্ষেত্রে ট্রায়াল অফার ক্লাইন্টকে আকৃষ্ট করে। যেমন লিড জেনারেশনের কাজের ক্ষেত্রে আপনি তাকে ২/৩টা স্যাম্পল এট্যাচ করে দিতে পারেন কাভার লেটারেই। তাহলে ক্লাইন্ট বুঝবে আপনি এই কাজ ভালোভাবেই জানেন।
কাভার লেটারে আপনি নিজেকে একজন সেলসম্যান হিসেবে ভাবুন। আপনার প্রোডাক্ট/সার্ভিস সেল করার জন্য এই একটাই সুযোগ! তাই আপনার এপ্রোচ হতে হবে পজেটিভ। ফার্স্ট পিচে ক্লাইন্ট যদি আপনাকে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকে, এরপর তার সাথে প্রজেক্ট নিয়ে বিস্তর আলোচনার সুযোগ পাওয়া যায়।
মনে রাখবেন, একটা জব পোষ্টে মোটামোটি ২৫/৩০টার মত বিড পরে। এবং ক্লাইন্ট হয়তো এর মধ্যে ১/২/৩ জনকে হায়ার করবে। যদি কাজটি এন্ট্রি লেভেলের তাহলে এর জন্য সে প্রতিটা কাভার লেটারে খুব বেশি সময় দিবেনা। আর কাজ যদি এক্সপার্ট লেভেলের হয় বা একটু লং টাইমের জন্য হয় তাহলে সে কাভার লেটার বেশ মনোযোগ দিয়েই পড়ে। কারণ একটা ভুল হায়ারিং তার বেশ টাকা এবং সময় নষ্ট করে দিতে পারে। সো জবের ধরণ দেখে সেই অনুযায়ী বিড করতে হবে।
অবশ্যই অযাচিত শব্দ লিখে কাভার লেটারকে বড় করা যাবেনা। কোনও অপ্রাঙ্গিক কথা লেখার কোনও মানেই হয়না।
উপরের এই জিনিসগুলো মাথায় রেখে আপওয়ার্কের জবে বিড করলে কাজ পাবার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।
সম্প্রতি আমার এই অভিজ্ঞতা এবং গাইডলাইনগুলো আমার বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে ভালো ফলাফল দিয়েছে। তাই ছোট করে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আমাদের অনেকের সাথেই হয়তোবা বিডিং স্ট্রেটেজি গুলো মিলবেনা, কারণ একেক স্কিলসেটের একেক প্রফেশনাল নিজেদের মত করে বিড করেন। কিন্তু যারা আপওয়ার্কে বিড করে কাজ পাচ্ছেন না তারা এই গাইডলাইনগুলো ফলো করলে পজেটিভ রেজাল্ট পাবেন বলে আশা করছি।
আপনাদের যদি এই পয়েন্টগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়ে থাকে তাহলে অন্যান্যদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ করলাম। যেকোনো ধরণের মতামত এবং গঠনমূলক সমালোচনার জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ!
Saiful Islam6 years ago
আসিফ ভাই, ভাল লিখেছেন। 🙂
niravasif6 years ago
অনেক ধন্যবাদ সাইফুল ভাই 🙂
Redwanul Haque4 years ago
অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়লাম, খুব ভালো লিখেছেন নিরব ভাই
tusar baroi4 years ago
আমি ফাইবারে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ,রেগুলার কাজ করি ,ফাইভস্টার রিভিউ আছে কয়েকটা ,কিন্তু upwork সম্বন্ধে আমার কোন ধারণা নেই কিভাবে কানেক্ট কেনে কিভাবে বিট করে , যদি আমাকে কেউ upwork এ কাজ করার জন্য লাইফ সাপোর্ট দিতে পারেন , শুধু কানেক্ট কেনা এবং বিড করা এবং প্রোপাইলস সাজানো ,যোগাযোগ করেন , সাপোর্ট করার জন্য মাসে কত টাকা নিবেন