July 26, 2016
ইউটিউব ভিডিও র্যাঙ্ক করা নিয়ে এতো অস্থিরতা কেন?চাকুরীর ইন্টারভিউতে যে সব জিনিস মাথায় রাখা জরুরি! চাকুরীর ইন্টারভিউ টিপস
আমাদের দেশে আমরা দেখি প্রায়ই প্রচুর চাকুরী প্রার্থী ইন্টারভিউ তে ডাক পেলেও ঠিক মত পারফর্ম করতে পারেন না। আজকের এই যুগে একাডেমিক রেজাল্টই কাঙ্ক্ষিত চাকুরীর জন্য যথেষ্ট নয়। একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি বাড়তি কিছু স্কিল আপনাকে অন্যান্য প্রার্থীদের থেকে আলাদা করে দিতে পারে। আমাদের মধ্যে অনেকেই ছোটবেলায় একটা শব্দ শুনতাম “এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস”। একটা সময় আমরা শুধু খেলাধুলা কিংবা নাচ গান অভিনয় এসব কাজকেই এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস হিসেবে বুঝতাম তাই না? কিন্তু এই ছোট টার্মদের মধ্যে আরও অনেক কিছুই আছে যা কিনা আমদের কর্পোরেট লাইফে নানান ভাবেই ভ্যালু অ্যাড করতে পারেন। যেমন হতে পারে আপনার ক্রিকেট টিমের লিডিং এক্সপেরিয়েন্স। আপনি কয়েকটা ভাষা জানেন কিংবা খুব ভালো লিখতে পারেন।
আমাদের দেশের জব মার্কেটের অবস্থা খুবই ভয়াবহ এমনটাই আমরা বলতে শুনি। আবার কর্পোরেটে যারা রিক্রুট করছেন তারা বলেন যে স্কিল্ড রিসোর্স পারসন উনারা পাচ্ছেন না। তাহলে আসলে গ্যাপটা কোথায়?
গ্যাপটা হচ্ছে আমাদের প্রস্তুতিতে! আমরা শুধু গ্রাজুয়েশন শেষ করি। ফার্স্ট ক্লাস রেজাল্ট থাকা আমাদের জন্য জরুরি কিন্তু আমরা জানি না আমরা কি জব মার্কেটে প্রবেশ করার জন্য রেডি কি’না। মার্কেট ডিম্যান্ড কি এবং সেই তুলনায় আমরা কতটুকু এলিজ্যাবল। অনেকক্ষেত্রেই দক্ষতার বিচারে আপনি অনেক ভালো রেজাল্টধারীদের পিছনে ফেলে দিতে পারবেন।
তাই না?
একটা জিনিস আমাদের মাথায় রাখতে হবে সেটা হচ্ছে, আমাদের একাডেমিক পড়াশুনার রেজাল্ট এবং সার্টিফিকেট হচ্ছে শুধুমাত্র ইন্টারভিউ বোর্ডের প্রবেশপত্র! সেখান থেকে আমাদের নতুন আরেকটা সংগ্রামে নামতে হয়। সেখানে পারফর্ম করে জব এচিভ করতে হয়। এরপর শুরু হয় সেই জবে নিজের দক্ষতা প্রমাণ!
আমি আমার জীবনে বেশ কিছু ইন্টারভিউ ফেস করেছি এবং ইন্টারভিউ বোর্ডে রিক্রুটার হিসেবে বেশ কিছু ক্যান্ডিডেট বাছাই করেছি। বই পড়ে, বিভিন্ন আর্টিকেল থেকে জেনে এবং আমার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি এই আর্টিকেলটি লিখেছি।
ইন্টারভিউ ফেস করতে গিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেই কিছু কমন ভুল করে থাকেন। চলুন দেখে নেই এই ভুল গুলো কি এবং কিভাবে এগুলা ঠিক করবেনঃ
১। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সাথে নিয়ে যাওয়াঃ ইন্টারভিউতে ডাক পাবার পর আপনার সমস্ত ডকুমেন্ট সাথে নিয়ে যাবেন। যেসব কাগজপত্র সত্যায়িত দরকার হয় সেগুলা আগে থেকেই রেডি করে নিতে হবে। অবশ্যই আপনার সিভি বা রিজিউমি প্রিন্ট করে নিয়ে যেতে ভুলবেন না। অন্তত একটা কলম সাথে রাখা জরুরি।
২। পোশাকঃ ফর্মাল ড্রেস সবসময়ই ইন্টারভিউর জন্য পারফেক্ট। খুব সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে যাবেন। সুন্দর গেটআপ আপনার কনফিডেন্টও বাড়িয়ে দেয়। কড়া বডিস্প্রে মাখবেন না কারণ এটা বিরক্তিকর। মুখে দাঁড়ি থাকলে সুন্দর করে সাজাবেন। ক্লিন শেভ করতে না পারলে অন্তত কর্পোরেট একটা লুক যেন থাকে চেহারায়। ইসলামী লেবাস থাকলে দাঁড়ি সেভাবেই মেইন্টেইন করা উচিত।
৩। টু দ্যা পয়েন্ট উত্তর দিনঃ রিক্রুটার মাঝে মাঝেই এলোমেলো প্রশ্ন করে আপনাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন। সেক্ষেত্রে নিজেকে সামলে যেটা আপনার কাছে সঠিক মনে হয় সেটাই উত্তর দিবেন। ভুলভাল ইংলিশ উচ্চারণ করবেন না। ইংলিশে প্রশ্ন করলে সেটা ইংলিশেই উত্তর দিবেন। না পারলে অনুমতি নিয়ে বাংলায় উত্তর করবেন। ভুলেও কোনও উত্তরকে জটিল করে তুলবেন না। সহজ সরল ভাষায় কথা বলবেন।
৪। পজিটিভ বডিল্যাঙ্গুয়েজঃ ইন্টারভিউ বোর্ডে কনফিডেন্ট থাকবেন। কোনও প্রশ্ন না পারলেও খুব বেশি ঘাবড়ে যাবেন না। মিথ্যা বলে বিপদে পড়ার চেয়ে কিছু না বুঝলে সুন্দর করে জিজ্ঞেস করুণ। হাত পা নাচাবেন না। যেই চেয়ারে বসে কথা বলবেন অহেতুক সেটায় দুলবেন না। এগুলা বাজে এচিটিউড।
৫। জব এবং কোম্পানি সম্পর্কে প্রপার হোমওয়ার্কঃ যে কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছেন সেখানকার যাবতীয় ইনফরমেশন বিশেষ করে তাদের প্রডাক্ট, সার্ভিস, ক্লাইন্ট, প্রজেক্টস, মার্কেটে তাদের উপস্থিতি এসব স্টাডি করে যাবেন। কোম্পানির ব্যাপারে আপনি যত বেশি জানবেন ততই বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবেন ইন্টারভিউ বোর্ডের মেম্বারদের। যেই পজিশনের জন্য এপ্লাই করেছেন সেই পজিশনের রিকুয়ারমেন্টস এবং রেস্পন্সিবিলিটিস গুলো খুব ভালো করে জেনে যাবেন যেন আপনি কেন তাদের কোম্পানির জন্য এই পজিশনে বেষ্ট ফিট সেটা তাদেরকে ফিল করাতে পারেন।
৬। বিরক্ত হবেনা, বিরক্ত করবেন নাঃ রিক্রুটারের কোনও কথায় বিরক্ত হওয়া যাবেনা। তারা যা বলেন আগে মন দিয়ে শুনতে হবে এরপর সেটার রিপ্লাই করতে হবে। উনারা আপনার টলারেন্স লেভেল যাচাই করতে পারেন, আপনাকে হাইপার করে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন। সো এগুলা মাথায় রাখতে হবে। সেই সাথে আপনার কোনও কথায় যেন উনারাও বিরক্ত না হয় সেটা খেয়াল রাখবেন।
৭। স্যালারির বিষয় স্মার্টলি হ্যান্ডেল করাঃ অধিকাংশ কোম্পানিই জব পোষ্টে তাদের স্যালারি উল্লেখ করে দেয়। তারপরও ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনার এক্সপেক্টেড স্যালারির ব্যাপারে জানতে হতে পারে। তখন ব্যাপারটা বেশ স্মার্টলি হ্যান্ডেল করতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোম্পানির ওই পজিশনের জন্য বেষ্ট ডিজায়ারড স্যালারিতে জয়েন করার ব্যাপারে আশ্বাস দিলে ভালো ইম্প্রেশন ক্রিয়েট হয়।
৮। কিছু প্ল্যান নিয়ে যাওয়াঃ যেই পজিশনের জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন সেখানে যেই দায়িত্ব পালন করা হতে পারে সেটাকে আরও ইফেক্টিভ করার জন্য আপনি আগে থেকেই কিছু রাফ প্ল্যান বা আইডিয়া বানিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। যেন এগুলা আপনি বোর্ডের সামনে উপস্থাপন করলে উনারা বুঝতে পারে আপনি বেশ সিনসিয়ার এবং কাজের প্রতি ডেডিকেটেড। এটা আপনাকে বাকিদের থেকে একদমি আলাদা করে তুলবে। চাইলে কিছু রিসার্চ করে নিয়ে যেতে পারেন দেখানোর জন্য।
এইসব ব্যাপার ইন্টারভিউ বোর্ড ফেস করার সময় মাথায় রাখলে ভালো রেজাল্ট আশা করা যায়। কিছু কোম্পানিতে কয়েক ধাপে ইন্টারভিউ নেয়া হয়। হয়তো দ্বিতীয় ধাপে প্রেজেন্টেশান দেয়ার ব্যাপারেও বলা হতে পারে সেক্ষেত্রে আপনাকে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশানের কাজ জানতে হবে এবং অডিয়েন্সের সামনে কথা বলতে হবে। তৃতীয় পর্যায়ে হয়তো আপনাকে ছোট্ট কোনও প্র্যাক্টিকাল কাজ করতে দেয়া হবে সেক্ষেত্রে নিজের মাইন্ডসেট ঠিক রেখে সেটা শেষ করতে হবে।
যারা সবেমাত্র গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি কাজে লাগতে পারেঃ
কি করবে ফ্রেশ গ্রাজুয়েটরা ?
চাকুরীর ইন্টারভিউ টিপসের এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকবে আপনার বন্ধু বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন। কোথাও শেয়ার করলে অনুগ্রহ করে আমার নাম এবং মূল ব্লগ পোষ্টের লিংক অবশ্যই ম্যানশন করুন। আপনার কোনও পজেটিভ নেগেটিভ মন্তব্য থাকলে কিংবা গঠনমূলক সমালোচনা কমেন্ট বক্সে লিখুন। ধন্যবাদ 🙂
(এই পোষ্টে ব্যবহারকৃত ছবি গুলা Freepics থেকে নেয়া এবং Canva তে এডিট করা )