July 07, 2014
একজন মোহাম্মদ আশরাফুল এর গল্পওয়েবসাইট থেকে অর্থ উপার্জনের পরীক্ষিত ১০টি উপায়!
ওয়েবসাইট থেকে অর্থ উপার্জন করায় আসলে তেমন কোনও রহস্য নেই। একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ও চমৎকার কৌশলের মাধ্যমে যে কেউ তার ওয়েবসাইট থেকে অর্থ আয় করতে পারেন। এমনকি, এই কাজকে আপনি আপনার পেশা হিসেবেও নিতে পারবেন যদি এতে আপনার ইচ্ছা এবং উৎসাহ থাকে।
আমাদের দেশে অনেকেই ওয়েবসাইট তৈরি করেন। কেউ কোম্পানির জন্য, কেউ নিজের পণ্য/সেবা বিক্রি করার জন্য। কেউবা আবার নিজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে অন্যদেরকে কিছু শিখানোর জন্য।
এই আর্টিকেলে আমি ১০টি উপায় নিয়ে আলোচনা করবো। এর বাইরেও আপনি আরও অনেকগুলো উপায় খুঁজে বের করতে পারেন। তো দেরী না করে চলুন আমাদের মূল আলোচনায় চলে আসা যাক।
১। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংঃ নিজের ওয়েবসাইট থেকে আয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এর অর্থ হচ্ছে, অন্য কোনও কোম্পানির পণ্য নিজের ওয়েবসাইটের ভিজিটরদের কাছে বিক্রি করে কমিশন আয় করা। বিশ্বের প্রায় বড় বড় মার্কেটপ্লেস এবং ইকমার্স কোম্পানিগুলোর অ্যাফিলিয়েট মডেল উন্মুক্ত আছে। আপনি চাইলেই তাদের পণ্য প্রচারের সুযোগ নিতে পারেন। আপনি বিভিন্ন পণ্য বা সেবার তথ্য দিয়ে আর্টিকেল লিখতে পারেন।
আপনার যদি মনে হয়, আপনার ওয়েবসাইটে আসা ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইট থেকে লিঙ্ক ক্লিক করে কোনও পণ্য ক্রয় করতে পারে তাহলেই আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে পারবেন। অ্যামাজন, ইবে, আলিএক্সপ্রেস, ক্লিকব্যাঙ্ক এগুলো বেশ নামকরা কোম্পানি যাদের অ্যাফিলিয়েট করে অনেকেই লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করছেন।
২। নিজের পণ্য বিক্রি করাঃ আপনার নিজের তৈরি করা কোনও পণ্য থাকলে সেটাও আপনার নিজের ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই বিক্রি করা সম্ভব। ধরুন আপনার নিজের একটি ইকমার্স ওয়েবসাইট থাকলে সেখানে আপনি নানান ধরণের পণ্য লিস্টিং করে বিক্রি করতে পারেন ভিজিটরদের কাছে। আপনি চাইলে বিভিন্ন তথ্য নির্ভর কন্টেন্ট তৈরি করে আপনার ভিজিটরদের আপনার পণ্য/সেবা ক্রয়ের জন্য আকৃষ্ট করতে পারেন।
আপনার নিজের ডিজিটাল পণ্য সমূহ যেমন ইবুক, ভিডিও কোর্স এসবও বিক্রি করতে পারেন আপনার ভিজিটরদের কাছে।
৩। গুগোল অ্যাডসেন্সঃ আপনার ওয়েবসাইটে আসা ভিজিটর সবসময় আপনার উল্লেখ করা পণ্য/সেবা কিনতে বাধ্য নয়। যদি আপনি দেখেন আপনার ভিজিটররা আপনার দেয়া লিঙ্ক থেকে পণ্য কিনতে আগ্রহী না, তবে তারা আপনার লেখাগুলো পড়তে বারবার আপনার ওয়েবসাইটে আসে তাহলে আপনি গুগোল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমেও আয় করতে পারেন। অর্থাৎ গুগোলের অ্যাড দেখিয়ে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্টগুলো মানসম্মত হয়ে থাকলে এবং গুগোলের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হলে আপনি গুগোলের কাছে আপনার ওয়েবসাইটটি সাবমিট করতে পারেন। গুগোল আপনার ওয়েবসাইট আপনার সাইটকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে গুগোলের বিজ্ঞাপনগুলো প্রদর্শন করতে অনুমতি দিবে।
সারাবিশ্বের প্রচুর মানুষ পূর্ণকালীন পেশা হিসেবে গুগোল অ্যাডসের মাধ্যমে উপার্জনকে বেছে নিয়েছে। গুগোল অ্যাডসেন্স ছাড়াও আরো অনেক অ্যাড পাবলিশিং নেটওয়ার্ক আছে যেমন, মিডিয়া ডট নেট, প্রোপেলার অ্যাডস মিডিয়া ইত্যাদি।
৪। বিজ্ঞাপনের স্পেস বিক্রিঃ আপনার ওয়েবসাইট বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেলে এবং নিয়মিত প্রচুর ভিজিটর আসা শুরু করলে আপনি ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন স্পেস বা অ্যাড স্লট বিক্রি করতে পারবেন। বিভিন্ন ব্র্যান্ড আপনার ওয়েবসাইটেরর ব্যানারে কিংবা ডানপাশে/বামপাশে নিজের কোম্পানির বিজ্ঞাপন দিতে আগ্রহ প্রকাশ করবে এবং সরাসরি আপনার সাথে দরাদরি করবে। এভাবেও ওয়েবসাইট থেকে বেশ ভালো রকম আয় করা যায়।
৫। স্পনসর পোষ্টঃ আপনার ওয়েবসাইটে অন্য কোম্পানির রিভিউ কিংবা পণ্যের ব্যাপারে লেখার জন্য অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। আপনার ওয়েবসাইট যদি সার্চ ইঞ্জিন থেকে ভালো ভিজিটর পায় এবং সাইটের অথারিটি বেশ ভালো অবস্থানে থাকে তাহলে বলা যায় মোটামোটি ভালো দামেই স্পনসর পোষ্ট গ্রহণ করতে পারবেন আপনি। বিশ্বের অনেক বড় বড় ওয়েবসাইট শুধমাত্র এই স্পনসর পোষ্ট থেকেই প্রতি মাসে প্রচুর আয় করছে। ৪০ বা ৫০ ডলার থেকে শুরু করে একেকটি স্পনসর পোষ্টের জন্য অনেক ওয়েবসাইট ৫০০ বা ১০০০ ডলার পর্যন্ত আয় করে।
৬। ভিজিটরদের অনুদানঃ আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট ভিজিটরদের নানানভাবেই সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে আপনি চাইলে আপনার সাইটে একটি অনুদান কিংবা Donation ব্যবস্থা রাখতে পারেন। আপনার কোনও ভিজিটর স্বেচ্ছায় সেখানে অর্থ দান করতে পারে। আপনার ওয়েবসাইট থেকে আয়ের উৎস হিসেবে এটিও খারাপ না।
৭। লিড জেনারেশনঃ পণ্য বিক্রি করা কিংবা বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের পাশাপাশি আপনি আপনার ওয়েবসাইটে অন্য কোম্পানির জন্য লিড জেনারেশন করেও আয় করতে পারেন। লিড জেনারেশনের অর্থ হচ্ছে, আপনার ভিজিটরের কাছ থেকে কিছু উপাত্ত কিংবা তথ্য সংগ্রহ করা। অনেক কোম্পানি কিংবা মার্কেটপ্লেস এই লিড জেনারেশনের জন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিবে। কিছু বিক্রি না করে শুধু নাম,ফোন নাম্বার, ইমেইল, জিপকোড এসব সংগ্রহ করা হয় বলে এটা বেশ জনপ্রিয় একটি মাধ্যম।
লিড জেনারেশনের জন্য জনপ্রিয় কিছু সিপিএ নেটওয়ার্ক হচ্ছে ম্যাক্সবাউন্টি, পিয়ারফ্লাই, সিপিএ গ্রিপ ইত্যাদি।
৮। ইমেইল সাবস্ক্রাইবার লিস্ট তৈরিঃ আপনার সাইটের ভিজিটরদের কে আপনার নতুন নতুন কন্টেন্টের আপডেট দিতে তাদেরকে ইমেইল সাবস্ক্রাইবের মাধ্যমে লিস্ট তৈরি করতে পারেন। এবং এই সব ইমেইল সাবস্ক্রবারদের কাছে আপনি চাইলেই বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্য/সেবার ব্যাপারে ইমেইল করতে পারেন। ইমেইল সাবস্ক্রাইবাদের কে Owned Media বলা হয়ে থাকে কারণ আপনি চাইলেই এই লিস্টের সাবস্ক্রাইবদের নিজের ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রিত কন্টেন্ট দেখাতে পারেন।
ইন্টারনেট মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রিতে একটি কথা বেশ প্রচলিত, The Money is in the LIST!
৯। লিঙ্ক বিক্রি করাঃ আপনার ওয়েবসাইটের ডোমেইন অথারিটি, পেজ অথারিটি এবং নিয়মিত ভালো ভিজিটরের আনাগোনা শুরু হলে আপনি আপনার সাইটের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ওয়েবসাইটের লিঙ্ক বসানোর মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাজেশনে ভালো করতে কোয়ালিটি ব্যাকলিঙ্কের ভূমিকা প্রচুর। তাই অন্য ওয়েবসাইটগুলো শুধু মাত্র সার্চ ইঞ্জিনে সুবিধা পাবার জন্য আপনার ওয়েবসাইট থেকে লিঙ্ক কিনতে আসবে। আপনি দরাদরি করে তাদের কাছে “Contextual do follow Backlinks” বিক্রি করতে পারবেন।
১০। ওয়েবসাইট বিক্রিঃ আমরা যেভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন দোকান বিক্রির কথা শুনি ঠিক তেমনি ইন্টার্নেটের বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে ওয়েবসাইট কেনাবেচা হয়। আপনার ওয়েবসাইট থেকে যদি ধারাবাহিকভাবে কয়েকমাসে অন্তত ৪০০/৫০০ ডলার আয় হয় তাহলে আপনি সেই সাইটকে বিক্রি করতে পারবেন অন্তত ২০/২৫ গুণ বেশি দামে। অর্থাৎ আপনার কোনও ওয়েবসাইট যদি বিগত ৬/৭ মাসে গড়ে ৫০০ ডলার করে আয় করে তাহলে আপনি এই সাইট ৫০০ ডলার*২০= ১০,০০০ ডলারে (আনুমানিক) বিক্রি করতে পারবেন। আপনার সাইটের আয় যদি আরও বেশি হয় তাহলে এটি ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেশি দামেও বিক্রি করা সম্ভব!
আপনার ওয়েবসাইট বিক্রি করতে মার্কেটপ্লেসে সাইটের যাবতীয় তথ্য এবং আয়ের বিবরণ ও প্রমাণ উল্লেখ করে লিস্টিং করতে হয়। সেখানে ক্রেতারা আপনার সাইটের তথ্য দেখে বিড করতে পারেন। আপনি চাইলে তাদের সাথে দরাদরিও করতে পারেন। এমন কয়েকটি মার্কেটপ্লেসের মধ্যে https://empireflippers.com https://www.flippa.com/ বেশ জনপ্রিয়।
আজ এই পর্যন্ত। ওয়েবসাইট থেকে অর্থ আয়ের এই ১০ উপায়ের উপর পরবর্তীতে আরো বিস্তারিত কিছু লেখার ইচ্ছা আছে। আপনার যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
আপনার যেকোনো মতামত কমেন্ট করে জানাবেন আশা করছি। ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকবেন।
Abu bakar6 years ago
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়ার জন্য ধন্যবাদ 😍
niravasif6 years ago
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
Dr Nayem Hasan4 years ago
“একজন ডিজিটাল মার্কেটার, একজন শিক্ষক, একজন মোহাম্মদ আসিফ” এমন শিরোনামের একটা আর্টিকেল সরকারী ওয়েবসাইটে দেখে- সেখান থেকে আপনার সাইট ভিজিট করলাম। আপনার লেখা গুলো অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ